তক্ষক এতো দামি কেন | গবেষকরা কি বলছে জানুন

তক্ষক এতো দামি কেন, কি আছে এই তক্ষকের মধ্যে, তক্ষকের দাম কোটি টাকার হবার কারণ কি!

তক্ষক এতো দামি কেন

তক্ষক অর্থাৎ সরল প্রজাতির এই প্রাণীটিকে নিয়ে কোটি কোটি টাকার গল্প শোনেননি এমন লোক খুব কমই আছে । বিভিন্ন সুত্র হতে যানা যায় তক্ষকের আকৃতি যদি ১৭ ইঞ্চি হয় তাহলে দাম পাওয়া যাবে এক হাজার কোটি টাকা। 

সেই হাজার কোটি টাকার স্বপ্নে বিভোর হয়ে অনেকেই ভূলে গিয়েছে রাত দিনের ব্যাবধান।
বোন বাদড়,পুরনো গাছ কিংবা দালান কোঠায় লুকিয়ে থাকা তক্ষকের টক্কে আওয়াজের অপেক্ষা যেন ফুরাতেই চাইনা।। 
সেই কোটি টাকার অপেক্ষায় থাকা একজন তক্ষক শিকারীর তথ্যমতে জানা যায় "তক্ষক দিয়ে নাকি ক্যান্সারের মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয় এই জন্য তক্ষকের এতো দাম।
তক্ষক ঘরে থাকলে দ্রুত বড় লোক হওয়া যায়। আরো জানতে পারলাম, তক্ষকের মাথার মধ্যেকার ম্যাগনেটের দাম নাকি এক কোটি টাকা। 

তক্ষকের গল্প যেন হাজার কিংবা লাখে নয়,কোটি টাকার গন্ডি পেরিয়ে।
কি আছে এই তক্ষকের মধ্যে,কেনোইবা এতো দাম। আসুন সেই প্রশ্নের ধারাবাহিকতায় জানার চেষ্টা করি তক্ষকের মধ্যে কোটি টাকার রহস্য কি।

তক্ষকের ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম Gekko। তক্ষক একটি গেকোনিডি গিরগিটি প্রজাতির প্রাণী।
পিঠের দিকে ধূসর, নীলচে-ধূসর বা নীলচে বেগুনি-ধূসর রঙের সংমিশ্রণ। সারা শরীরে থাকে লাল ও সাদাটে ধূসর ফোঁটা। পিঠের সাদাটে ফোঁটাগুলি পাশাপাশি ৭/৮টি ছোট সারিতে বিন্যস্ত।

কমবয়সী তক্ষকের লেজে পরপর গাড়-নীল ও প্রায় সাদা রঙের বলয় রয়েছে। মাথা অপেক্ষাকৃত বড়, নাকের ডগা ও চোখা ভোঁতা। চোখ বড় বড়, মণি ফালি গড়নের। লেজ সামান্য নোয়ানো।
এরা কীটপতঙ্গ, ঘরের টিকটিকি ছোট পাখি ও ছোট সাপ খেয়ে থাকে।
ছাদের পাশের ভাঙা ফাঁক-ফোঁকড় বা গর্তে অথবা গাছে এরা বাস করে। অনেকে ভুলক্রমে তক্ষককে বিষাক্ত সরীসৃপ হিসেবে চিহ্নিত করে। তক্ষক দক্ষিণ এশিয়ায় বিপর্যস্ত একটি প্রাণী । বাংলাদেশসহ মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৬০০ প্রজাতির তক্ষকের বাস লক্ষ করা যায়। 
বাংলাদেশে প্রায় ২ প্রজাতির তক্ষক দেখা যায়। এশিয়ান প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও আধুনিক চিকিৎসাায় হাঁপানি,এইডস, ক্যান্সারের ওষুধ তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানা যায়। কার্যত এ ঔষধ এবং পরিক্ষা ফলপ্রসূ না হলেও তক্ষকের বিলুপ্তি ও শিকার চলছে অবৈধ ভাবে ও অহরহ।

যেখানে টাকার প্রলোভন সেখানে বৈজ্ঞানিক বাণী নিরুপায়।
তক্ষক নিয়ে চলছে চরম প্রতারণা,রাতের আধারে একদল প্রতারক চক্র ঘুরে বেড়াচ্ছে বন বাদাড় কিংবা দালান কোঠার আশেপাশে।
তক্ষকে মেতেছে গ্রামের কিছু অর্থলোভী মানুষ।
কেউ কেউ তক্ষকের কঙ্কাল বিক্রি করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এ যেন রূপকথার গল্পের মত - তক্ষকের আড়ালে লুকিয়ে আছে একদল ক্ষমতাসিন চক্র,রীতিমত তারা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা - তেমনই প্রসঙ্গে প্রশাসনিক অভিযানে অনেকই হয়েছে নগদ অর্থ এবং তক্ষক সহ গ্রেফতার।
তবুও যেন কমতেই চাইছেনা তক্ষক চক্রের মাফিয়া গডফাদার আর তক্ষক সংগ্রহের কর্মীগুলো। তবে কি তক্ষকেই লুকিয়ে আছে কোটি কোটি টাকা!

আসুন এবার জেনে নিবো তক্ষকের শরীর নিয়ে গবেষকরা কি বলছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, তক্ষকের দাম লাখ লাখ টাকা নয়। এর দাম পাঁচ-দশ টাকাও হবে না। কারণ তক্ষকে মূল্যবান কিছুই নেই। বরং সমানে তক্ষক নিধনের কারণে প্রাণীটির বিলুপ্তি ঘটবে।
যশোর সরকারি এম এম কলেজের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান প্রফেসর অসিত বরণ ভৌমিক বলেন,এরা পোকামাকড় খায়। কিন্তু এরা মহামূল্যবান প্রাণী নয়। তক্ষক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

এছাড়াও তক্ষক দিয়ে ক্যান্সার এবং কেমো প্রসঙ্গে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালের ক্যান্সার বিভাগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক অনুপম চক্রপানি বলেন, ‘ক্যান্সারের ওষুধ কিংবা কেমো--কোনো কিছুই তক্ষক দিয়ে তৈরি হয় না।

অথচ এখনো একদল অসুস্থ মস্তিষ্কের অর্থলোভী মানুষজন চরম বিস্ময়কর ও অতি লোভনীয় এই তথ্যটির সত্যতা যাচাই না করেই বেশ কিছুদিন থেকেই গোপনে নেমে পড়েছেন ‘তক্ষক’ সংগ্রহে।
তক্ষক প্রাকৃতিক সম্পদ -- পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভূমিকা অন্যতম।
তক্ষক নিয়ে বানিজ্য বন্ধ করার দায়িত্ব আপনার আমার আমাদের সকলের।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url