গুগল এডসেন্স সম্পর্কে জানুন - গুগল এডসেন্স কি?

গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে ঘরে বসে অনলাইন থেকে ইনকাম করা সম্ভব। আপনি ভিডিও শেয়ার করে এবং আর্টিকেল শেয়ার করে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে আয় করতে পারবেন। কিভাবে এডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভ পাবেন! আপনি কি এডসেন্স একাউন্ট দ্রুত এপ্রুভ পেতে চান? যদি অল্প সময়ের মধ্যে এবং সঠিক পন্থায় Adsense Approve নিতে চান তাহলে আজকের পোস্ট কন্টিনিউ করুন।

আমি ২০১৯ সাল থেকে গুগল এডসেন্সের সাথে কানেক্টেড আছি।  গুগল এডসেন্স সম্পর্কে আমার ব্যাক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন হয়েছে।

কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল এবং ব্লগ সাইটের জন্য ঝামেলা ছাড়াই এডসেন্স একাউন্ট এপ্রুভ পাবেন তারিই ধারাবাহিকতায় আজকের এই পোস্ট। আশাকরি সম্পুর্ন পোস্ট পড়বেন।

গুগল এডসেন্স কি?

গুগল Adsense হল Google দ্বারা পরিচালিত একটি এড নেটওয়ার্ক সার্ভিস। যার মাধ্যমে গুগল advertiser রা টাকা দিয়ে যেকোনো বিজ্ঞাপন ইন্টারনেটে প্রদর্শন করাতে পারে। যার ফলে publisher রা নিজের ব্লগ, ইউটিউব ভিডিও তে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অনলাইন থেকে টাকা উপার্জন করতে পারে।

সহয ভাবে বলতে গেলে গুগল এডসেন্স হল একটি Advertising Network যার মাধ্যমে ব্লগ,ওয়েবসাইট,ইউটিউব চ্যানেল ও এপ্স মালিকেরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয় করে থাকেন।
বর্তমানে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে গোটা বিশ্বের কয়েক লক্ষাধিক পাবলিশার প্রতিমাসে অনলাইন থেকে প্রচুর পরিমানে ইনকাম করে থাকেন । এডসেন্স একাউন্টের আরেকটি প্রচলিত নাম আছে। বাংলাতে এই এডসেন্স একাউন্টকে অনেক-ই সোনার হরিণ বলে আখ্যায়িত করেছে ।

এডসেন্স একাউন্ট কত প্রকার?

বর্তমানে গুগল এডসেন্সের যে পরিমানে জনপ্রিয়তা বেড়ে যাচ্ছে তাতে এডসেন্স সম্পর্কে আমাদের সকল তথ্য জানা উচিৎ। একটা সময় ছিলো যখন বাংলা আর্টিকেল শেয়ারিং ব্লগ ওয়েবসাইট গুগল এডসেন্স এপ্রুভ দিতো না। পরবর্তীতে যখন বাংলা আর্টিকেলের উপর থেকে গুগল এডসেন্স বিধি নিষেধ তুলে নিলো  তার পর থেকে এডসেন্সের জনপ্রিয়তা আরেকধাপ বেড়ে গেলো।
গুগল এডসেন্সের প্রকারভেদ। এডসেন্স একাউন্ট দুই প্রকার।
  1. Hosted AC. (হোস্টেড এডসেন্স)
  2. Non Hosted AC. (নন হোস্টেড এডসেন্স)
Hosted Adsense এবং Non Hosted Adsense একাউন্টের মধ্যে খানিকটা পার্থক্য আছে। দুটোই একিই জিনিস শুধুমাত্র কার্য ক্ষেত্র আলাদা।

আসুন প্রথমে জেনে নিবো হোষ্টেড এডসেন্স একাউন্ট কাকে বলে।
  • Hosted Adsense
গুগলের নিজেস্ব প্লাটফর্ম যেমনঃ ইউটিউব,এডমোব,ব্লগস্পট দ্বারা যেসব এডসেন্স একাউন্ট খোলা হয় তাকে হোস্টেড এডসেন্স একাউন্ট বলা হয়। 
  • Non Hosted
নিজেস্ব হোস্টিং স্টোরেজ দ্বারা গঠিত ওয়েবসাইটের জন্য যে এডসেন্স একাউন্ট খোলা হয় তাকে নন হোষ্টেড একাউন্ট বলা হয়।

হোষ্টেড এবং নন হোষ্টেড একাউন্টের মধ্যে পার্থক্য কি?

আপনি হয়তো হোষ্টেড একাউন্ট এবং নন হোষ্টেড একাউন্টের মধ্যকার পার্থক্য কিছুটা বুঝতে পেরেছেন। তারপরও আরেকটু সহয ভাবে ভেংগে বলছি, হোস্টেড এডসেন্স হল গুগলের সাথে পার্টনারশিপ হয়ে ব্লগিং, ইউটিউবিং করে আয় করার মাধ্যম। অর্থাৎ গুগল আপনাকে আনলিমিটেড হোস্টিং স্টোরেজ দিবে বিনিময়ে আপনার ইনকামের ভাগ নিবে।
আপনি যদি ইউটিউব থেকে এডসেন্সের মাধ্যমে  অর্থ উপার্জন করতে চান তাহলে আপনার জন্য হোস্টেড এডসেন্স একাউন্ট। এছাড়াও ব্লগস্পট দিয়ে বানানো ওয়েবসাইটের জন্যেও হোস্টেড এডসেন্স একাউন্ট।

নন হোষ্টেড এডসেন্স একাউন্ট।
সম্পুর্ন  নিজেস্ব হোস্টিং স্টোরেজ দ্বারা গঠিত ওয়েবসাইট। নন হোষ্টেড এডসেন্স একাউন্টকে গুগল খুব কম-ই এপ্রুভ দেয় কারণ এতে গুগলের ইনকাম তুলনামূলক কম হয়। গুগল চারিদিক থেকে প্রচুর ইনকাম করে। যেখানে গুগলের ইনকাম কম, সেখানে গুগলের নানা ইস্যু।
তবে আপনি যদি ভালো মানের একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে পারেন এবং সেখানে প্রতিনিয়ত এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল শেয়ার করতে পারেন তাহলে প্রচুর আয় করতে পারবেন।
মনে রাখবেন এটা কিন্তু প্রচুর ব্যয় বহুল।

কোনটা নিবেন ; হোষ্টেড নাকি নন হোষ্টেড!
এটা সম্পুর্ন আপনার কাজের উপর ডিপেন্ড করবে। আপনি যদি ইউটিউব প্লাটফর্মের কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হন তাহলে আপনার জন্য হোষ্টেড এডসেন্স ই বেষ্ট। হোষ্টেড এডসেন্সের সাথে ব্লগস্পট সাইট কানেক্ট করেও আয় করতে পারবেন। এতে কোনপ্রকার হোস্টিং কেনার প্রয়োজন নেই। এছাড়াও আপনার ব্লগ সাইটের সাব ডোমেইন ব্লগস্পট ডটকম থেকে টপ লেভেল ডোমেইন যেমনঃ-.Com-.Net-.Info ইত্যাদি ডোমেইনে ব্লগস্পট এড্রেস মুভ করতে পারবেন।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার, আপনি কোনটা ব্যবহার করবেন।

কিভাবে এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করতে হয়। 
এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করার জন্য আপনার একটি ইউটিউব চ্যানেল অথবা একটি ব্লগ ওয়েবসাইট থাকা আবশ্যক।
এডসেন্সের Terms And Conditions এর সাথে সম্মতি জ্ঞাপনের মাধ্যমে ইউটিউব চ্যানেলের জন্য এক হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং ৪ হাজার ঘন্টা পাব্লিক ওয়াচটাইম থাকা আবশ্যক। ব্লগের ক্ষেত্রে সুন্দর এবং ফ্রেশ টেমপ্লেট দ্বারা ডিজাইন - সর্বনিম্ম ২০-২৫টি এসইও ফ্রেন্ডলি ৫০০+ শব্দের আর্টিকেল এবং ব্লগে - কন্টাক্ট - এবাউট - প্রাইভেসি পলিসি - টার্মস এন্ড কন্ডিশন পেইজ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ব্লগে নিয়মিত পোস্ট লিখতে হবে, সাইটের বয়স সর্ব নিম্ম ৩মাসের বেশি হওয়া লাগবে। 
গুগল এডসেন্সের সমস্ত শর্ত পালনের পর আপনি একটি এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন। ততক্ষণে আপনার এডসেন্স একাউন্ট হচ্ছেনা যতক্ষণ গুগল আপনাকে ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউবে এপ্রুভাল না দিবে।
এছাড়াও আপনি ব্লান একটি এডসেন্স একাউন্ট তৈরি করতে পারবেন তবে তা দিয়ে ইনকাম করতে পারবেন না। ইনকাম করতে হলে ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেল থাকা লাগবে।

কিভাবে Adsense এ Apply করবেন?

ইউটিউবের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটর স্টুডিও তে প্রবেশ করে Monetization অপশন থেকে এবং ব্লগের ক্ষেত্রে ব্লগ ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করে Earning অপশন থেকে এপ্লাই করতে পারবেন।
সঠিক নাম ঠিকানা প্রদান করুন তারপর আপনার এডসেন্স একাউন্টের জন্য রিভিউ রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে দিন। 
রিভিউ রিকুয়েষ্ট পেন্ডিং এ থাকবে এরপর এক দিন থেকে ৬ সপ্তাহের ভিতরে আপনি রেজাল্ট পেয়ে যাবেন। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে এপ্রুভ পাবেন নয়লে রিজেক্ট। সব কিছুর আপডেট ইমেইল এর মাধ্যমে জানিয়ে দিবে গুগল এডসেন্স টিম ।
যদি এডসেন্স এপ্রুভ দেয় তাহলে আপনি ইনকাম করতে পারবেন।

কিভাবে ইনকাম হয় আপনি কি জানেন? 
ইউটিউবে ইনকাম হয় সাধারণত ভিডিওতে চলমান এড ক্লিকের মাধ্যমে আর ব্লগে দৃশ্যমান এড ক্লিকের মাধ্যমে।
বিজ্ঞাপন দাতা গুগলের কাছে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য অর্থ দ্বারা ডিল করে। আর গুগল এডসেন্স পাব্লিশারদের মাধ্যমে সেসব বিজ্ঞাপন ইন্টারনেটে প্রচার করে। গুগল বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছ থেকে যে অর্থ নেয় তার মধ্য থেকে কিছু অংশ পাব্লিশারদের এডসেন্স একাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে ধিরে ধিরে যখন এডসেন্স একাউন্টে ১০০ ডলার পূর্ণ হবে তখন সেই ডলার আপনি ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করে উইথড্র করতে পারবেন। এর আগে পারবেন না। 
এর আগে আপনার একাউন্টে ১০ ডলার পূরণ হলে গুগল আপনার ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠাবে। চিঠিতে ৬সংখ্যা বিশিষ্ট একটি পিন থাকবে। পিনের মাধ্যমে এডসেন্স একাউন্টকে ভেরিফাইড করতে হবে। 

কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় এই কথাটি যেমন সত্য তেমনই এডসেন্স এপ্রুভ পেতে হলেও আপনাকে তাদের টার্মস গুলো মানতে হবে।
একটা ফাউল/ব্লান ওয়েবসাইট অথবা অন্যের কন্টেন্ট চুরি/কপি করে ব্যবহার করা ইউটিউব চ্যানেলে কখনো এপ্রুভ হয় না। ওয়েব সাইটে এপ্রুভাল পাওয়াটা অনেক সহজ। আপনি যদি সঠিক ভাবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে কাস্টমাইজেশন করতে পারেন তবেই এটা সহজ। এর জন্য প্রথমে আপনাকে ব্লগে পোস্ট লেখার নিয়ম জানতে হবে এবং এসইও শিখতে হবে। 

ইউটিউব চ্যানেলেও একিই নিয়ম - ইউটিউবে নিজেস্ব ভিডিও পাব্লিস করার পাশাপাশি টাইটেল ট্যাগ ও ডেস্ক্রিপশনের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে।
সাব ফর সাব থেকে দূরে থাকুন,প্রমোশন এড়িয়ে চলুন। ফেস্ক্যাম ভিডিও পাব্লিস করুন এবং এডিটিং ভালো করুন।
আপনার চ্যানেলের ক্যাটগরি অনুযায়ী নিয়মিত ভিডিও আপলোড করুন,দর্শকের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে ভিডিও বানান। সব মিলিয়ে কিভাবে এই কাজ গুলো করতে পারেন সেটা আপনি নিজেই সিলেক্ট করুন। অন্যদের ভিডিও দেখুন এবং খেয়াল করুন তাদের চ্যানেলের টাইটেল,থাম্বনেইল,ডেসক্রিপশন কেমন। এটাই হবে বেসিক ধারণা। 

আগে শিখুন তারপর ইনকাম করার কথা ভাবুন। কাজ না জেনে সারাদিন ইনকাম ইনকাম করলে কখনো সফল হওয়া যায়না। তাই অবশ্যই ভালো কিছু শেয়ার করার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। হোক সেটা ভিডিও অথবা আর্টিকেল। একবার কাজ শিখে কাজ করতে পারলে একদিন দেখবেন, আপনার সফলতার গল্প অন্যরা লিখবে তখন নিজের কাছে খুব ভালো লাগবে। নিজেকে প্রাউড ফিল করবেন। 

শেষ কথা। 

ইন্টারনেট জগতের কোন কাজ সহজ নয়,লিগ্যাল  ভাবে ইনকাম করাটা অনেক কঠিন তবুও আমি বলবো অশ্লীলতা ভূলে সামাজিক ভিডিও শেয়ার করুন এবং শিক্ষনীয় পোস্ট পাব্লিস করুন। ভালো কাজের ফলে আপনি আজীবন ইন্টারনেটে সীমাবদ্ধ থাকতে পারবেন নয়লে রিজেক্ট হতে বাধ্য হবেন।
মনে রাখবেন অনিয়ম এখানে চলবে না,গুগল সবিই জানে এবং বোঝে।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Next Post Previous Post
2 Comments
  • Mozaffar
    Mozaffar ১১ আগস্ট, ২০২২ এ ৯:৩৮ PM

    Good post

  • SHOFi 001
    SHOFi 001 ১১ আগস্ট, ২০২২ এ ১১:০৪ PM

    Thanks

Add Comment
comment url